হাতে কলমে তারকার শ্রেণীবিন্যাসকরন
প্রতিটি তারকা ভিন্ন। কিছু বড়, কিছু ছোট, কিছু গরম, কিছু ঠান্ডা। নীল বা হলুদ বা লাল। মানুষ তারকারাজি নিয়ে গবেষণা করছে বহুকাল ধরে।তারকারাজিকে ভালো করে চিনতে আবিষ্কার করেছে তারকার শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতি। পৃথিবী পরিমন্ডলের রাসায়নিক মৌলসমূহের সহজ পাঠের জন্য আছে পর্যায় সারণী, উদ্ভিদ ও প্রানীজগতের শ্রেণীবিন্যাসের জন্য আছে নির্দিষ্ট নিয়মাবলি বা পদ্ধতি। তেমনি তারকারাজির শ্রেণীবিন্যাসের জন্য আছে কতগুলো পদ্ধতি।তারকারাজির এই শ্রেনীবিন্যাস সহজেই একটি তারকাকে বর্ণনা করতে সাহায্য করে। আমরা আজকে জানব সে সম্পর্ক।। এখানে পাঁচটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
image credit: wikiHow
১। শুধুমাত্র রং দেখেই তারকার শ্রেণীবিন্যাস করা সম্ভব। তাপমাত্রা নির্ধারনে তারকার রঙ নির্দেশক হিসাবে কাজ করে। বর্তমানে, দশ রঙের তারকা আমাদের চোখে পড়ে। প্রতিটি রঙের সাথে যুক্ত থাকে তাপমাত্রার পরিসীমা। O শ্রেনীর তারকার বর্ণ নীল / অতিবেগুনী । B শ্রেনীর তারকার বর্ণ নীল সাদা, A শ্রেনীর তারকার বর্ণ সাদা, F শ্রেনীর তারকার বর্ণ হলুদ সাদা, G শ্রেনীর তারকার বর্ণ হলুদ, K শ্রেনীর তারকার বর্ণ কমলা এবং M শ্রেনীর তারকার বর্ণ লাল। অন্যান্য তিনটি শ্রেণী অবলোহিত। L শ্রেনীর তারকার বর্ণ দৃশ্যমান আলোতে খুব গাঢ় লাল দেখায়। এসব তারকা ক্ষার ধাতু এবং ধাতুর হাইড্রাইডের বর্ণালী দেখায়। T শ্রেনীর তারকা L শ্রেনীর তুলনায় শীতল। Y শ্রেনীর তারকা সবচেয়ে শীতল। এরা বাদামী বামন তারক এবং L, T থেকে আলাদা। উদাহরণস্বরূ, রাতের আকাশে তাকালেই সহজে চোখে পড়ে অরিওন নক্ষত্রপুঞ্জের বেটেলজিউস তারকাটি। এটি M শ্রেণীর তারকা কারন বর্ণ লাল।
image credit: wikiHow
২।উপরের চিত্রে একদিকে O থেকে Y পর্যন্ত তারকার রঙ অন্যদিকে ০-৯ পর্যন্ত প্রতিটি রঙের মধ্যে ১০ টি তাপমাত্রার ব্যান্ড দেখানো হয়েছে ।।O থেকে Y পর্যন্ত এবং ০-৯ পর্যন্ত তাপমাত্রা পর্যায়ক্রমে কমে যায়।নির্দিষ্ট বর্ণের পরে নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা রেখে সহজে তাপমাত্রা হিসেব করা যায়। ০ হচ্ছে সবচেয়ে গরম এবং ৯ সবচেয়ে শীতল। উদাহরণস্বরূপ A0, A5 এর চেয়ে বেশি গরম, যা A9 এর চেয়ে গরম, যা F0 এর তুলনায় গরম। উপরে আলোচিত বেটেলজিউস M1 শ্রেণীর একটি তারকা।
তারকার আকার নির্দেশক একটি রোমান সংখ্যা তাপমাত্রার পরে যোগ করে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। 0 বা Ia+ একটি hypergiant তারকা নির্দেশক। Ia, Iab এবং Ib সুপারজায়ান্ট তারকার ( যথাক্রমে উজ্জ্বল, মাঝারি, অণুজ্জ্বল) প্রতিনিধিত্ব করে। II উজ্জ্বল দৈত্য, III দৈত্য, IV উপ-দৈত্য, V প্রধান পরম্পরার নক্ষত্র (এটি একটি তারকার জীবনের অংশ যেখানে তারকাটির সর্বাধিক সময় ব্যয় হয়) এবং VI উপ-বামন । D একটি একটি সাদা বামন তারকা নির্দেশক। উদাহরণ: DA7 (সাদা বামন), F5Ia + (হলুদ হাইপারজায়ান্ট), G2V (প্রধান-পরম্পরার হলুদ তারকা)। আমাদের সূর্য G2V এবং বেটেলজিউস M1la বা উজ্জ্বল সুপারজায়ান্ট।
১. তারকার আলোকে প্রিজম ব্যবহার করে আলাদা করা যায়। প্রিজমের ভিতর দিয়ে টর্চ লাইট অতিক্রম করালে কতগুলো বর্ণের একটি পরিসীমা পাওয়া যাবে, যা বর্ণালী নামে পরিচিত।তারকার আলো এমন বর্ণালী তৈরী কর। প্রত্যেকটি তারকার বর্ণালী ভিন্ন ভিন্ন। প্রতিটি তারকার বর্ণালীর মধ্যে অন্ধকার লাইন থাকে। যা শোষণ লাইন নামে পরিচিত।এই শোষণ লাইন থেকে তারকার রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
২.তারকার বর্ণালীটি একটি ডাটাবেসের সাথে তুলনা করা হয়। একটি ভাল জ্যোতির্বিজ্ঞান ডাটাবেস প্রতিটি তারকার টাইপের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সাধারণ বর্ণালী দিবে ।সেই বর্ণালী ডাটাবেস দেখে সহজেই তারকার শ্রেণীবিভাগ করা যায়।
পদ্ধতি ৪। ধাতুর উপস্থিতি নির্ণয়
image credit: wikiHow
১. একটি তারকা মধ্যে ধাতুর (হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম ছাড়া অন্য উপাদান) অনুপাত নির্ধারণ করা। কোনো তারকার মধ্যে 1% এরও বেশি ধাতু থাকলে তাকে ধাতু সমৃদ্ধ তারকা বলা হয়। এসব তারকাকে পপুলেশন -১ এর তারকা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। কোনো তারকার মধ্যে ০.1% ধাতু থাকলে তাকে ধাতু-দরিদ্র তারকা বলা হয়। এসব তারকাকে পপুলেশন -২এর তারকা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। মহাবিশ্বের আদিকালে পপুলেশন-২ জাতের তারকারাজি গঠিত হয়েছিলো, কারন তখন ধাতুর পরিমান কম ছিলো।
২. কিছু তারকা তাত্তিকভাবে ধাতুহীন, কিন্তু এদের খুজে পাওয়া খুবই কঠিন। এদেরকে পপুলেশন-৩ শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।এই তারকারাজি বিগ ব্যাংয়ের পরেই সৃষ্টি হয় বলে আশা করা হয়, যখন একমাত্র উপাদান হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম ছিল এবং অন্য কোনো ধাতু বিদ্যমান ছিল না।
১.তারকার উজ্জ্বলতা পরিবর্তনশীল কিনা নির্ধারণকরা। সমস্ত তারকা নয় তবে কিছু কিছু তারকা এই ধর্ম প্রদর্শন করে। এই উজ্জ্বলতার পরিবর্তন নানা কারনে হতে পারে।সেটা ভিন্ন আলোচন।
image credit: wikiHow
২.কোনো তারকা গ্রহনকারী বাইনারি তারকা কিনা তা নির্ধারণ করা।দুটি তারকা একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরলে তারা বাইনারী তারকা। রাতের আকাশে সর্বাধিক উজ্জ্বল তারকা সিরিয়াস বা লুব্ধক। সিরিয়াস ও সিগনাস X-1 এই তারকা দুটি বাইনারী তারকা। আমরা খালি চোখে সিগনাস X-1 দেখতে পাইনা। কারন এই তারকাটি ব্ল্যাক হোলে পরিনত হয়ে গেছে।
উৎসঃ উইকিহাউ, উইকিপিডিয়া।।
No comments