মহাজাগতিক রশ্মির উৎসের সন্ধানে
তেজস্ক্রিয়তা কি? কোনো মৌলিক পদার্থ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আলফা,বিটা ও গামা রশ্মির বিকিরণেরর নাম তেজস্ক্রিয়তা। তেজস্ক্রিয়তা বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এর পূর্বে বিজ্ঞানীরা জানত না যে, কোনো মৌলিক পদার্থ থেকে বিভিন্ন কণার বিকিরণ পাওয়া যেতে পারে। তাইতো মেরি কুরি এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করে।
যখন মেরি কুরি এবং হেনরি বেকেরেল দ্বারা প্রথম তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কার হয়েছিল, তখন বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে বায়ুমণ্ডলীয় আয়নীকরণ (যখন ইলেকট্রনগুলি বায়ুমণ্ডলীয় অণু থেকে ছিন্ন হয়) শুধুমাত্র বিকিরণের কারণে ঘটে। আর এই বিকিরণ ভূগর্ভস্থ তেজস্ক্রিয় শিলা, পাথর বা বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয় গ্যাসের উপস্থিতিতে তৈরি হয। তারপর,ভিক্টর হেস নামে আরেকজন পদার্থবিজ্ঞানী আকাশের মধ্য দিয়ে ক্রমবর্ধমান পাঠানো একটি বেলুনে আবৃত তিনটি ইলেকট্রোমিটার ব্যবহার করে একটি পরীক্ষা পরিচালনা করেছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে ৪,৬০০ মিটার (১৫,০০০ ফুট) উচ্চতায় আয়নীকরণ হার স্থল স্তরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশী।তিনি যুক্তি দেন যে উচ্চ মাত্রার আয়নীকরণ হার শুধুমাত্র একটি শক্তিশালী উৎসের উপস্থিতি দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে এবং এই বিশাল বিকিরণের উৎস পৃথিবীর বায়ুমন্ডল থেকে বাইরে । আর এভাবেই মহাজাগতিক রশ্মি আবিষ্কৃত হয়ে গেলো।
মহাজাগতিক রশ্মি কি?
মহাজাগতিক রশ্মি উচ্চ-শক্তির বিকিরণ।এটমিক নিউক্লিয়াস বা উচ্চ শক্তির প্রোটনে গঠিত। আমাদের নিজস্ব ছায়াপথের সর্বত্র ভ্রমণ করে। মহাজাগতিক রশ্মি সূর্য দ্বারা উৎপাদিত হতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ সৌর সিস্টেমের বাইরে উৎপন্ন হয় এবং গ্যালাক্সি জুড়ে ভ্রমণ করে বলে জানা যায়। অধিকাংশ ছায়াপথীয় মহাজাগতিক রশ্মি প্রায় ৮৫% হাইড্রোজেন পরমাণুর নিউক্লিয়াস (প্রোটন),আলফা কণা (হিলিয়াম নিউক্লিয়ি) প্রায় ১২% এবং বাকী ৩% শুধু নিউক্লিয়াস এবং ভারী পরমাণুর ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত। যখন এই উচ্চ শক্তিবিশিষ্ট কণা আমাদের গ্রহের বায়ুমণ্ডলে আঘাত হানে, তখন বায়ুমন্ডলীয় নিউক্লিয়াস সঙ্গে ক্রিয়া করে তারা দ্বিতীয় এক ধরনের কণার ঝরণা সৃষ্টি করে। এই ঘটনাটি 'বায়ু ঝরনা' হিসাবে উল্লেখ করা যায়।
বায়ু ঝরণা
বায়ু ঝরনা হলো তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ এবং বায়ুমণ্ডলীয় আয়নিত কণার (যেমন, ইলেকট্রন, ফোটন এবং মিউওন) একটি বিশাল, বিস্তৃত ঝরণা যা বায়ুমন্ডলে ঘটে (এবং কখনও কখনও ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে)। একটি মহাজাগতিক রশ্মি অন্যান্য বায়ুমণ্ডলীয় নিউক্লিয়াসের সাথে মিথস্ক্রিয়া করলে এই ঘটনাটির উদ্ভব ঘটে।
ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী পিয়ের অগিনার ১৯৩৭ সালে দেখিয়েছিলেন যে, বায়ুমণ্ডলে উচ্চতর অংশে মহাজাগতিক কণার সাথে বায়ুমন্ডলীয় কনার সংঘর্ষে এমন ব্যাপক বায়ু ঝরনা ঘটে।মহাজাগতিক বিকিরণের তীব্রতা উত্তর মেরু বা দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি সর্বাধিক। তাই বিমান কর্মীরা মহাজাগতিক রশ্মি এর অভিজ্ঞতা বেশী পেতে পারে যদি তারা নিয়মিত এই এলাকায় কাছাকাছি কাজ করে। মহাজাগতিক রশ্মি আবিষ্কারের আগে, পদার্থবিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করত যে, আসলে তেজস্ক্রিয় ক্ষয়জনিত কারণে গামা রশ্মি উৎপন্ন হয়।এটি শুধুমাত্র ১৯৩০ এর দশকে পর্যাক্রমিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করা হয় যে, মহাজাগতিক রশ্মি গুলি বেশিরভাগই চার্জিত কনা।
চিত্র : বায়ু ঝরনা
তারপর, ১৯৫৪ সালে, কেমব্রিজের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির রসি কসমিক এক্স-রশ্মি গ্রুপ কর্তৃক প্রথম বাস্তব অস্তিত্বপূর্ণ বায়ু ঝরনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
মহাজাগতিক রশ্মির প্রকরণ
বিজ্ঞানীরা মহাজাগতিক রশ্মি কে চারটি প্রধান শ্রেণিতে শ্রেণীভুক্ত করেন।
বিশৃঙ্খল মহাজাগতিক রশ্মি
এগুলো হল নিম্ন শক্তির মহাজাগতিক রশ্মি এবং হেলিওসিথে (বুদবুদের মতো এমন অঞ্চল যা প্লুটো-এর কক্ষপথ অতিক্রম করে প্রসারিত হয় - অন্য কথায়, আমাদের সৌর সিস্টেমের প্রান্ত) উৎপত্তি বলে বিশ্বাস করা হয়। আর এই হেলিওসিথ অঞ্চলে সৌর বায়ুর (সূর্যের বায়ুমণ্ডল থেকে মুক্ত চার্জযুক্ত কণার প্রবাহ) কোন প্রভাব নেই। বিশ্বাস করা হয় যে, হেলিওসিথের বৈদ্যুতিকভাবে নিরপেক্ষ পরমাণুগুলি আয়নিত এবং ত্বরিত হয়ে বিশৃঙ্খল মহাজাগতিক রশ্মি উৎপন্ন করে। মজার ব্যপার হলো, যখন ভয়েজার-২ মহাকাশযানটি হেলিওইসিথ অতিক্রম করেছিল, তখন এ ধরণের কোনও ত্বরিত কণার উপস্থিতিজনিত তীব্রতা নির্নয় করতে পারে নি।
ছায়াপথীয় মহাজাগতিক রশ্মি
সাধারণভাবে গ্যালাকটিক কসমিক রে ( জিসি আর) হিসাবে সংক্ষিপভাবে প্রকাশ করা হয়। এই রশ্মি বাইরে থেকে আমাদের সৌর সিস্টেম প্রবেশ করে। তবে সাধারণত আমাদের ছায়াপথের মধ্যেই গঠিত হয়।মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে এই ধরনের মহাজাগতিক রশ্মি হল শক্তিশালী সুপারনোভের ফলাফল।একটি সুপারনোভার বিস্ফোরিত হওয়ার পর, গ্যাসীয় বিস্ফোরণের অবশিষ্টাংশের মধ্যে কণাসমুহ বার বার বাউন্স করে। আর মহাজাগতিক রশ্মি হিসেবে মুক্তি বেগ নিয়ে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
সৌর মহাজাগতিক রশ্মি
সাধারনত আধিক্যপূর্ন মহাজাগতিক রশ্মি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এটা আমাদের সৌর সিস্টেমের কেন্দ্র সূর্য থেকেই উৎপন্ন হয়। এই বেশিরভাগ রশ্মি সমুহ তুলনামূলকভাবে কম শক্তি সম্পন্ন প্রোটন। এই রশ্মি সমুহ সূর্যের পৃষ্ঠে তীব্র চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে শক্তি পায়।
উচ্চ শক্তির আল্ট্রা মহাজাগতিক রশ্মি
নামই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে, এই মহাজাগতিক রশ্মি সমুহ খুবই উচ্চ গতিশক্তি সম্পন্ন কণা। এই কণা সমুহ অত্যন্ত বিরল, এবং তাদের উৎস এখনও সম্পূর্ণরূপে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নিকট চিহ্নিত।
আর্জেন্টিনাতে অবস্থিত পিয়ের অগ্নার অবজার্ভেটরি একটি আন্তর্জাতিক মহাজাগতিক রশ্মি পর্যবেক্ষণকারী কেন্দ্র। এটি মহাজাগতিক রশ্মির উৎস ও অস্তিত্বের সরুপ নির্ণয় ও মহাজাগতিক সূত্র সনাক্ত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে!
চিত্রঃ পিয়ের অগ্নার অবজার্ভেটরি, আর্জেন্টিনা
এগুলো হল নিম্ন শক্তির মহাজাগতিক রশ্মি এবং হেলিওসিথে (বুদবুদের মতো এমন অঞ্চল যা প্লুটো-এর কক্ষপথ অতিক্রম করে প্রসারিত হয় - অন্য কথায়, আমাদের সৌর সিস্টেমের প্রান্ত) উৎপত্তি বলে বিশ্বাস করা হয়। আর এই হেলিওসিথ অঞ্চলে সৌর বায়ুর (সূর্যের বায়ুমণ্ডল থেকে মুক্ত চার্জযুক্ত কণার প্রবাহ) কোন প্রভাব নেই। বিশ্বাস করা হয় যে, হেলিওসিথের বৈদ্যুতিকভাবে নিরপেক্ষ পরমাণুগুলি আয়নিত এবং ত্বরিত হয়ে বিশৃঙ্খল মহাজাগতিক রশ্মি উৎপন্ন করে। মজার ব্যপার হলো, যখন ভয়েজার-২ মহাকাশযানটি হেলিওইসিথ অতিক্রম করেছিল, তখন এ ধরণের কোনও ত্বরিত কণার উপস্থিতিজনিত তীব্রতা নির্নয় করতে পারে নি।
ছায়াপথীয় মহাজাগতিক রশ্মি
সাধারণভাবে গ্যালাকটিক কসমিক রে ( জিসি আর) হিসাবে সংক্ষিপভাবে প্রকাশ করা হয়। এই রশ্মি বাইরে থেকে আমাদের সৌর সিস্টেম প্রবেশ করে। তবে সাধারণত আমাদের ছায়াপথের মধ্যেই গঠিত হয়।মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে এই ধরনের মহাজাগতিক রশ্মি হল শক্তিশালী সুপারনোভের ফলাফল।একটি সুপারনোভার বিস্ফোরিত হওয়ার পর, গ্যাসীয় বিস্ফোরণের অবশিষ্টাংশের মধ্যে কণাসমুহ বার বার বাউন্স করে। আর মহাজাগতিক রশ্মি হিসেবে মুক্তি বেগ নিয়ে মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
সৌর মহাজাগতিক রশ্মি
সাধারনত আধিক্যপূর্ন মহাজাগতিক রশ্মি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এটা আমাদের সৌর সিস্টেমের কেন্দ্র সূর্য থেকেই উৎপন্ন হয়। এই বেশিরভাগ রশ্মি সমুহ তুলনামূলকভাবে কম শক্তি সম্পন্ন প্রোটন। এই রশ্মি সমুহ সূর্যের পৃষ্ঠে তীব্র চৌম্বক ক্ষেত্র থেকে শক্তি পায়।
উচ্চ শক্তির আল্ট্রা মহাজাগতিক রশ্মি
নামই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে, এই মহাজাগতিক রশ্মি সমুহ খুবই উচ্চ গতিশক্তি সম্পন্ন কণা। এই কণা সমুহ অত্যন্ত বিরল, এবং তাদের উৎস এখনও সম্পূর্ণরূপে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের নিকট চিহ্নিত।
আর্জেন্টিনাতে অবস্থিত পিয়ের অগ্নার অবজার্ভেটরি একটি আন্তর্জাতিক মহাজাগতিক রশ্মি পর্যবেক্ষণকারী কেন্দ্র। এটি মহাজাগতিক রশ্মির উৎস ও অস্তিত্বের সরুপ নির্ণয় ও মহাজাগতিক সূত্র সনাক্ত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে!
চিত্রঃ পিয়ের অগ্নার অবজার্ভেটরি, আর্জেন্টিনা
No comments