মহাবিশ্বের অধিকাংশ পদার্থের অবস্থাঃঃ প্লাজমার চরম রূপ
আমাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে দর্শনীয় সকল পদার্থ কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় অবস্থায় আছে।কিন্তু রাতের আকাশে তাকালে মিটমিট করা তারার গঠন সম্পর্কে আমরা কি জানি তারকারাজি কি দিয়ে গঠিত?এগুলো কি পৃথিবীর পৃষ্ঠের মতই কঠিন পদার্থে গঠিত? না, এরা গঠিত প্লাজমা দিয়ে। আমরা বিভিন্ন নক্ষত্রের ভিতরের প্লাজমার অন্বেষণ করলে একটি আভাস পাব। আর তা হলো, যখন আমরা প্লাজমাতে শক্তি যোগ অবিরতভাবে করতে থাকব, তখন আমরা পর্যায়ক্রমে পদার্থের চুড়ান্ত ক্ষুদ্রতম এককে তথা মৌলিক কনা খুঁজে বের করতে পারব। সাধারণ প্লাজমায় ইলেক্ট্রন অরবিটাল আংশিকভাবে ভেঙ্গে যায় কিন্তু পরমাণু তাদের (ভিতরের কক্ষীয়) ইলেকট্রনসহ কিছু অরবিটাল ধরে রাখে।
"আমরা জেনে আশ্চর্য হব যে, আমাদের পৃথিবীর মত একটি তারকা যদি কোয়ার্কে পরিনত হয় তবে এর আয়তন হবে এক চা চামচ পরিমান"
অবশ্য সূর্যের কেন্দ্রে থার্মোনিউক্লিয়ার প্লাজমায় পরমাণু সম্পূর্ণভাবে আয়নিত থাকে বলে পরমানুর অরবিটাল বলতে কিছুই থাকে না। তখন ইলেক্ট্রন অরবিটালবিহীন পথে মুক্ত ভাবে চলাচল করে।আমরা কিংবা আমাদের পৃথিবীকে ঐ তাপমাত্রায় নেওয়া হলে কোনো পরমানু অবশিষ্ট থাকবে না। সব পরমানু ভেঙ্গে গিয়ে মুক্ত আয়ন ও ইলেক্ট্রনে পরিনত হবে । তাহলে কি আমাদের পৃথিবীতে বিরাজমান কঠিন, তরল পদার্থের পরমাণুসমূহ কোনো এক সময় প্লাজমা অবস্থায় ছিলো এবং পরবর্তীতে তাপ হারিয়ে বর্তমান অবস্থায় এসেছে?
বলতে গেলে- সত্যি তাই।
আমরা সুপারনোভার নাম নিশ্চয়ই জানি? একটি বিস্ফোরিত সুপারনোভা প্লাজমা সূর্যের কেন্দ্রের প্লাজমা থেকে অনেক গরম ও চাপের মধ্যে থাকে। কিছু গবেষক একে নিউক্লিয়ন প্লাজমা বলে থাকেন।এই প্লাজমায় নিউক্লিয়াসের বন্ধন ভেঙ্গে যায়। সুতরাং এই প্লাজমা হলো ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের একটি মিশ্রণ। আর এই প্লাজমাই মহাবিশ্বের সব ভারী উপাদান তথা মৌল তৈরির বিশেষ সৃষ্টিশীল এলাকা (intensely creative zone) । সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে প্রাপ্ত এই প্লাজমাকে আরও চাপ প্রয়োগ করা হলে এর মুক্ত প্রোটন সহজে মুক্ত ইলেকট্রন শোষণ করে নিউট্রনে পরিনত হয়ে অধিক ঘনত্বপূর্ন ( ultra-dense) অঞ্চল তৈরী করবে, যার নাম নিউট্রন তারকা(neutron star)।অথ্যাৎ, প্রোটন ও ইলেক্ট্রন মিলে নিউট্রন তৈরী করে।
ইলেক্ট্রন + প্রোটন = নিউট্রন
ভাবতেও অবাক লাগছে হয়ত। নিউট্রন তারার আরও অধিক উচ্চ শক্তির অবস্থার অধীনে চাপ প্রাপ্ত হলে চরম ঘনত্বপূর্ন ভারী নিউট্রন তারকার মধ্যস্থ নিউট্রন ভেঙ্গে গিয়ে মুক্ত কোয়ার্ক- গ্লুয়ন তৈরী করে যার নাম কোয়ার্ক- গ্লুয়ন প্লাজমা। এই মহাবিশ্বে অনেক কোয়ার্ক স্টার আছে।পৃথিবীটা কত বিশাল, কিন্তু আমরা জেনে আশ্চর্য হব যে, আমাদের পৃথিবীর মত একটি তারকা যদি কোয়ার্কে পরিনত হয় তবে এর আয়তন হবে এক চা চামচ পরিমান। আসলে, কত ঘনত্বপূর্ন হলে এটি সম্ভব ? সুতরাং কোয়ার্ক - গ্লুয়ন হলো ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের গাঠনিক ক্ষুদ্রত্তম কণা।যখন মহাবিশ্বের বয়স এক মিলিসেকেন্ডে ছিলো, তখন কোয়ার্ক - গ্লুয়ন পদার্থের ক্ষুদ্রত্তম কণা হিসেবে বিরাজ করে ছিলো। গবেষকরা অনুমান করেন যে কোয়ার্ক ভেঙ্গে প্রিয়ন নামক আরও এক ধরনের প্লাজমা থাকতে পারে এই মহাবিশ্বে।
সুতরাং মহাবিশ্বের সৃষ্টি কালীন সময়ের মৌলিক কণা সম্পর্কে জানার জন্য প্লাজমা একটি সহায়ক মাধ্যম।
No comments