মহাবিশ্বের অধিকাংশ পদার্থের অবস্থাঃঃ প্লাজমার রকমফের
প্লাজমা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে ।যেমন কোল্ড বা শীতল প্লাজমা, আলট্রা কোল্ড বা অতি শীতল প্লাজমা, তাপীয় প্লাজমা ইত্যাদি।
শীতল প্লাজমা
খুব কম ঘনত্বের একটি গ্যাসে বৈদ্যুতিক প্রবাহ প্রয়োগের দ্বারা এই ধরনের প্লাজমা তৈরি করা যেতে পারে। একটি গ্যাসে বৈদ্যুতিক শক্তিপ্রয়োগ করা হলে, ইলেকট্রন আয়নের তুলনায় অনেক বেশী গতিশক্তি অর্জন করে কারন ইলেকট্রন ভর অনেক কম।ইলেকট্রন এবং আয়ন পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়। তাই তাদের মধ্যে বিরল সংঘর্ষ হয় বলেই উল্লেখযোগ্য শক্তি স্থানান্তর ঘটে না।তড়িৎশক্তি প্রবাহের ফলে ইলেকট্রন শক্তি শোষন করে গরম হয়। তাই যথেষ্ট গতিশক্তি অর্জন করে। কারন গ্যাসের গতিশক্তি পরম তাপমাত্রার সমানুপাতিক। কিন্তু ঠান্ডা প্লাজমার ক্ষেত্রে পরমাণুর ভরের সব অংশ ধারণকারী আয়ন তাপমাত্রার অভাবে যথেষ্ট গতিশক্তি অর্জন করতে পারে না। তাই আয়নের গতিশক্তি অনেক কম। এর অর্থ এই যে সিস্টেমের গড় গতি শক্তি বা তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকে।উদাহরণস্বরূপ একটি প্লাজমা টিভি বা একটি নিয়ন আলোতে আয়নিত গ্যাসের শক্তির তুলনায় সূর্যের কেন্দ্রের প্লাজমার শক্তি অনেক গুনে বেশী। প্লাজমা টিভি এক ধরনের ঠান্ডা প্লাজমার উদাহরণ।
"পৃথিবীর আয়োনোস্ফিয়ার অঞ্চল ঠান্ডা প্লাজমার একটি বাস্তব উদাহরণ। এই অঞ্চলটি আয়নিত গ্যাস এবং উত্তেজিত গ্যাস পরমাণু দ্বারা হালকাভাবে পূর্ণ থাকে"
"পৃথিবীর আয়োনোস্ফিয়ার অঞ্চল ঠান্ডা প্লাজমার একটি বাস্তব উদাহরণ। এই অঞ্চলটি আয়নিত গ্যাস এবং উত্তেজিত গ্যাস পরমাণু দ্বারা হালকাভাবে পূর্ণ থাকে"
আমরা পূর্বেই জেনেছি, উচ্চ তাপমাত্রায় গতিশীল ইলেক্ট্রন বহির্মুখী চাপ ও চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরী করে । কিন্তু ঠান্ডা প্লাজমা , এ ধরনের কোন উপলব্ধি জনক বহির্চাপ ও চৌম্বক ক্ষেত্র উৎপন্ন হয় না। পৃথিবীর আয়োনোস্ফিয়ার অঞ্চল ঠান্ডা প্লাজমার একটি বাস্তব উদাহরণ। এই অঞ্চলটি আয়নিত গ্যাস এবং উত্তেজিত গ্যাস পরমাণু দ্বারা হালকাভাবে পূর্ণ থাকে। উত্তেজিত পরমাণু হলো, সেই সকল পরমানু যারা এক বা একাধিক ইলেকট্রন নিন্ম শক্তির কক্ষপথ থেকে উচ্চ শক্তির কক্ষপথে নেওয়ার মত শক্তি যোগান দিতে পারে কিন্তু পরমাণুকে পুরাপুরি ত্যাগ করার জন্য যথেষ্ট শক্তি ইলেক্ট্রনকে যোগান দিতে পারে না।আয়োনোস্ফিয়ারে উত্তেজিত গ্যাসের পরমাণু আভা আরোরা তৈরি করে। অনেক ঠান্ডা প্লাজমাও বিভিন্ন পর্যায়ের উত্তেজিত নিরপেক্ষ পরমাণু ধারণ করতে পারে। নিচের চিত্রটিতে হাইড্রোজেন, উত্তেজিত হাইড্রোজেন পরমাণু এবং হাইড্রোজেন প্লাজমার তুলনা করা হলো। হাইড্রোজেনের আসলে অনেক উত্তেজিত অবস্থা রয়েছে, প্রত্যেক অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যর ফোটন নির্গত হয়।
চিত্র : উত্তেজিত হাইড্রোজেন পরমাণু এবং হাইড্রোজেন প্লাজমার তুলনা
অতি শীতল প্লাজমা
আমরা অতি শীতল(ultracold) প্লাজমাও পেতে পারি, যা ১° সেন্টিগ্রেড থেকে পরম শূন্য তাপমাত্রা পর্যন্ত শীতল হতে পারে।কিভাবে সম্ভব? এত কম তাপমাত্রায় একটি পরমাণুকে কিভাবে আয়নিত করা সম্ভব?সম্ভব, আর সেটা সম্ভব লেজার রশ্মি ব্যবহার করে। লেজার রশ্মি হল একবর্ণী আলোর বিম। যেমন আমরা সূর্য থেকে আসা সাতটি রঙ কে একই সাথে সাদা আলো হিসেবে দেখি। কিন্তু যদি শুধু একটি বর্ণের আলো দিয়ে কাজ করি সেটা হলো লেজার রশ্মি। এখানে লেজার আলোক রশ্মি দিয়ে পরমানুর সর্ব বহিঃস্থ ইলেক্ট্রনকে যথেষ্ট শক্তি প্রদান করে নিউক্লিয়াস থেকে মুক্ত করা হয়। ফলে পরমানু আয়নিত হয়ে অতি ঠান্ডা প্লাজমা তৈরী করে। প্লাজমা বৈদ্যুতিকভাবে পরিবাহী কারণ তারা মুক্ত সঞ্চরনশীল ইলেকট্রন ধারন করে বিভব পার্থক্য তৈরী করে নির্দিষ্ট দিকে তড়িৎ পরিবহন করে। অধিকাংশ আলট্রা কোল্ড প্লাজমা ও ঠান্ডা প্লাজমা তড়িৎ অপরিবাহী। তবে কিছু কিছু ঠান্ডা প্লাজমা তড়িৎ পরিবহন করে, যখন হাজারো পরমানুর মধ্যে কিছু পরমানু সর্ববহিস্থ ইলেক্ট্রন হারিয়ে আয়নিত হয়।
তাপীয় প্লাজমা
গ্যাসে উচ্চ চাপ প্রয়োগ করলে গরম বা তাপীয় প্লাজমার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে আয়ন এবং ইলেক্ট্রনকে চাপ প্রয়োগ করা হয় যাতে ঘন ঘন সংঘর্ষ ঘটে এবং তাপের স্থানান্তর ঘটে।ঠান্ডা প্লাজমার মত নয়, এখানে ইলেকট্রন ও আয়ন একে অপরের সঙ্গে তাপীয় সাম্যাবস্থায় বিরাজ করে। তাপীয় প্লাজমার তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানে পরমানুর আয়নিত হওয়ার পরিমান বৃদ্ধি। এই প্লাজমার সব পরমানু আয়নিত করতে চাইলে প্রচুর শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। অত্যন্ত উচ্চ চাপের অধীনে 100% আয়নিত খুবই উত্তপ্ত গরম প্লাজমা পাওয়া যায়। নক্ষত্রের কেন্দ্রে হিলিয়াম / হাইড্রোজেন প্লাজমা সম্পূর্ণরূপে আয়নিত থাকে।
No comments