পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে উড়ছে চাঁদ

উৎসঃ ইএসএ 
এবছর একুশে ফেব্রুয়ারির একদিন আগে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি একটি বিস্বয়কর খবর দিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিল। সোলার এন্ড হেলিওস্ফেরিক অবজার্ভেটরির (SOHO) বিশ বছরের পুরনো ডেটা থেকে তারা এই চমকপ্রদ তথ্য উদঘাটন করে। এই তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সর্ব বহিঃস্থ অংশ( যা জিওকরোনা বা ভূমুকুট নামে পরিচিত)  চাঁদের কক্ষপথকে ছাড়িয়ে গেছে। সহজ করে বললে, চাঁদ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে অবস্থান করছে বা করে।
এখন জিওকরোনা সম্পর্কে একটু বলে নিই। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সর্ব বহিঃস্থ এক্সোস্ফিয়ারের বহিঃস্থ সীমা জিওকরোনা । সমুদ্র পৃষ্ঠের ৭০০ কিলোমিটার উপর থেকে প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এক্সোস্ফিয়ার বিস্তৃত। জিওকরোনা  অঞ্চলটি হাইড্রোজেন গ্যাসের মেঘে পূর্ণ। সেই সাথে আছে বিদীর্ণ সূর্যরশ্মির মাঝে গভীর মহাকাশ থেকে আসা অতিবেগুনির ক্ষীনকায় উজ্জ্বলতা। কিন্তু কে জানত এই অঞ্চলটি এত বিস্তৃত? তথ্য বলছে, পৃথিবীর ব্যাসের তুলনায় পঞ্চাশগুন গভীর এবং চাঁদের কক্ষপথ থেকে আরও দ্বিগুন দুরত্ব পর্যন্ত এই অঞ্চলটির সীমানা বিস্তৃত। তাইতো এই গবেষণার নেতৃত্ব দানকারী রাশিয়ান মহাকাশ গবেষণা ইনিস্টিউটের ইগোর বালিউকিন বলেছেন- পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের মধ্যে চাঁদ উড়ে।
সোলার এন্ড হেলিওস্ফেরিক অবজার্ভেটরির (SOHO) ১৯৯৫ সালে নাসা ও ইউরোপিয়ান  স্পেস এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে মাত্র দুই বছরের প্রজেক্ট প্লান নিয়ে মহাকাশে যাত্রা শুরু করেছিল।  কিন্তু আজ পর্যন্ত ২৪ বছর ধরে আশ্চর্যজনকভাবে সূর্য ও সূর্যের পরিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে নিরীক্ষণ  চালিয়ে যাচ্ছে। এটি ভূ- সৌর ব্যবস্থার ল-১ (L-1)অবস্থানে ঘুরছে।
এই অবজার্ভেটরির এক যন্ত্রের নাম SWAN. যেটি জিওকরোনা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে। SWAN এর সংবেদী অংশ জিওকরোনাতে হাইড্রোজেন এর উপস্থিতি চিহ্নিত করেছে। একই সাথে কোথায় এই হাইড্রোজেনের উপস্থিতি  কমে গিয়ে শুন্য হয়েছে? সেটাও ভালোভাবে চিত্রিত করেছে।
চিত্রঃ জিওকরোনার একটি আকর্ষণীয় ও ঐতিহাসিক ছবি। (উৎসঃ ইএসএ
এই শিল্পানুগ চিত্রটি পৃথিবীর জিওকরোনার একটি আকর্ষণীয় ও ঐতিহাসিক চিত্র। ১৯৭২ সালে এপলো -১৬ এর মহাকাশচারীদের দ্বারা চাঁদের উপরের প্রথম টেলিস্কোপ দিয়ে এই ছবিটি  তোলা হয়েছে। এই ছবিটি দেখাচ্ছে যে, জিওকরোনা পৃথিবীকে ঘিরে আছে এবং অতিবেগুনী রশ্মিতে উজ্জ্বল দ্যুতি ছড়াচ্ছে।
আমরা অনেক সময় খালি চোখে সূর্য কিংবা চাঁদকে বেষ্টন করে এমন বলয় দেখতে পাই। যা মেঘযুক্ত বা বৃষ্টি পরবর্তী আকাশে দেখা যায়। এটা জিওকরোনার বর্ধিত কোনো অংশ নয় বরং পৃথিবীর বায়ুর দ্যুতি।   

No comments

Theme images by JacobH. Powered by Blogger.