লজ্জাবতীর লজ্জার রহস্য


লজ্জাবতী উদ্ভিদটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। বাংলাদেশের সব জেলাতেই কম- বেশী এটি পাওয়া যায়।তবে স্থানভেদে এর নামের পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। একই জিনিস বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নাম! ইউরোপিয়ান ও আমেরিকানদের ভাষায় " touch me no plant " অথবা "shy plant ".এর বৈজ্ঞানিক নাম "Mimosa pudica". আপনাদের এতক্ষণে মনে পড়েছে হয়ত, লজ্জাবতীর সাথে খেলা করার সেই হারানো স্মৃতিগুলো। তবে এই হারানো স্মৃতি থেকে আমি খুঁজে পেয়েছি একটি প্রশ্ন।

 Source: Giphy
কৌতহলী মন মানুষকে ভাবিয়ে তোলে, করে আরও কৌতহলী এবং নিয়ে যায়  জ্ঞানের নতুন দিগন্তে। তাই আজকে গল্প সাজিয়েছি লজ্জাবতীর লজ্জার কারণ নিয়ে।
হালকা আঘাতে লজ্জাবতীর  শুধু পাতাগুলো ভাঁজ হয় ।আর শক্ত আঘাত পেলে লজ্জাবতীর পাতা গুলো ( পিনাল) ও সকল পাতার সাথে যুক্ত  শাখা (রেচিস) উদ্ভিদটির সেকেন্ডারী শাখার ( পালভিনাস) সংযোগ বিন্দু বরাবর সংকুচিত হয়ে নুইয়ে পড়ে।

চিত্রঃ লজ্জাবতীর শাখার বিভিন্ন অংশ
           
                                                        

কিভাবে  লজ্জাবতী পরিবেশের উত্তেজনা শনাক্ত করে?

প্রাণী সংবেদী কোষের মাধ্যমে পরিবেশের বিভিন্ন উত্তেজনায় সাড়া দিয়ে থাকে। প্রাণীর মত লজ্জাবতীর সংবেদী অঙ্গানু বা কোষ আছে নাকি?
বিজ্ঞানীদের অনুসিদ্ধান্ত মতে, লজ্জাবতীর পাতার নিন্মদিকে ম্যাকানোরিসেপ্টর নামক সংবেদী কোষ উত্তেজনায়  সাড়া দেয়ার জন্য দায়ী।

কিভাবে এত দ্রুত লজ্জাবতী সংকুচিত হয়?  

প্রানিকুল যেমন মাংসপেশী ব্যাবহার করে চলনে সক্ষম,তেমনি উদ্ভিদের ভিতর দিয়ে দ্রুত পানি প্রবাহের ফলে উদ্ভিদ নাড়াচাড়া করতে পারে। লজ্জাবতীর দেহকোষের ৭০-৮০% এলাকা জুড়ে ভ্যাকুওল নামক পানি ধারনকারী অঙ্গানু থাকে।

চিত্রঃ পানি ধারনকারী ভ্যাকুওল
                                               
যে সকল উদ্ভিদ কোষপ্রাচীরে বিশেষ পরিবহন নালীর (channel)দ্বারা উন্নত উপায়ে দ্রুত ভ্যাকুওলের পানি বহির্গমন ও অন্তর্গমন করতে পারে, তাদের অ্যাকুয়াপরিনস( aquaporins)  বলা হয়। এই পরিবহন নালীগুলো আয়ন(ion)চ্যানেলের এর মতই, তবে এরা আয়নের পরিবর্তে কোষস্থ পানিকে কোষ ঝিল্লি দিয়ে দ্রুত প্রবাহিত করে।
পানি কোষ হতে এত দ্রুত বের হওয়ার ফলে লজ্জাবতীর শাখা, পাতা এক সেকেন্ডের ভিতরে চুপসে যায় ও সংকুচিত হয়ে নুইয়ে পড়ে।  

 

চিত্রঃ একটি নুইয়ে পড়া লজ্জাবতীর কান্ড
 
কিভাবে পানি কোষ হতে এত দ্রুত বহির্গমন করে?  
আমরা জানি, কোষস্থ পানির বহির্গমন (অভিস্রবন) সম্ভব হবে যদি কোষরসের ঘনত্ব অপেক্ষা কোষের বাইরের ঘনত্ব বেশী হয়। ঠিক তেমন ঘটনা এক্ষেত্রেও ঘটে।
একটি কোষের কথা বিবেচনা করি।(নিচের চিত্রটি লক্ষ্যনীয়)
চিত্র: লজ্জাবতীর দ্রুত সংকোচন প্রক্রিয়া


১.লজ্জাবতীর সংবেদী কোষগুলো পরিবেশ থেকে উত্তেজনা পেলে,তৎক্ষনাৎ সংশ্লিষ্ট কোষে ক্যালসিয়াম আয়নের (Ca2+) অথ্যাৎ ধনাত্নক আয়নের পরিমান বেড়ে যায়।
২. কোষস্থিত  ধনাত্নক আয়নের প্রতি সংবেদনশীল লজ্জাবতীর কোষপ্রাচীরে অবস্থিত ক্লোরিন নির্গমন পথ খুলে যায়, ফলে কোষস্থ ক্লোরিন আয়ন(Cl-) কোষের বাইরে চলে আসে।  তাই ক্লোরিন ত্যাগকৃত কোষের ধনাত্নক চার্জের পরিমান আরও বেড়ে যায়।
৩.ক্লোরিনের বহির্গমনে সাড়া দিতে, পটাশিয়াম আয়নও (K+)ঝিল্লির নির্গমন পথে কোষের বাইরে চলে যায় এবং ক্লোরিন আয়নকে প্রশমিত করে।তাই কোষের ভিতরে ধনাত্নক আয়নের পরিমান আরও বেড়ে যায়,কিন্তু কোষের বাইরে পটাশিয়াম ও ক্লোরিন আয়ন থাকায়, কোষের ঘনত্ব বাইরের ঘনত্ব থেকে কমে যায়।
৪. কোষের  ভিতরে অভিস্রবনিক চাপ বেড়ে যাওয়ায় পানি দ্রুত কোষ ত্যাগ করে।
এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে এক সেকেন্ডের মতো সময় লাগে এবং এক কোষ হতে পরবর্তী কোষে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে লজ্জাবতীটি  দ্রুত নিস্তেজ হয়ে যায়।
কিন্তু ত্যাগকৃত পানি পুনরায় কোষে ফিরে এসে লজ্জাবতীর লজ্জা নিবারন করতে বেশ সময় নেয়।

No comments

Theme images by JacobH. Powered by Blogger.