মহাকাশযানে মহাকাশচারীদের উচ্চতা বাড়ে কেন?


সামান্য লম্বা হতে ইচ্ছে হয়? কিছু মাস মহাশূন্যে কাটিয়ে আসুন, তাহলে আপনার ইচ্ছা সাময়িক ভাবে পূর্ণ হবেকিভাবে সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব বটে। জানেন কি মহাশূন্যে ভ্রমন করলে মহাকাশচারীদের উচ্চতা গড়ে দুই ইঞ্চি বৃদ্ধি পায়? বিজ্ঞানীদের মতে, যে সকল মহাকাশচারী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে বাস করেন তাদের শরীরের উচ্চতা শতকরা তিন ভাগ বৃদ্ধি পায়নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেন- কেন এমনটি ঘটে?  
মহাকাশচারীদের লম্বা হওয়ার বড় কারন মাইক্রোগ্রাভিটিমাইক্রোগ্রাভিটি এটা আবার বিশেষ যাদু নাকি? না, মাইক্রোগ্রাভিটি কোনো যাদুর নাম নয়বরং এটি হল মহাশূন্যে মহাকাশচারীদের ওজনহীনতা
মানুষের শরীরকে সোজা দাঁড় করিয়ে রাখে তার মেরুদণ্ডআর মেরুদণ্ড বিভিন্ন কশেরুকার সমষ্টিধরা যাক, আমাদের মেরুদণ্ডের কশেরুকাগুলো শক্ত স্প্রিং এর মতযখন চাপ প্রয়োগ করা হয়, তখন এরা সংকুচিত হয়আর যখন চাপ অপসারণ করা হয় তখন এরা প্রসারিত হয়ঠিক তেমনি মানুষের মেরুদণ্ড প্রসারিত হয়, যখন সে মহাশূন্যে ভ্রমন করেপৃথিবীতে থাকলে মানুষের উপর মহাকর্ষের প্রভাব বেশী থাকেআর যখন মানুষ মহাশূন্য ভ্রমন করে, তখন মহাকর্ষ বল অনেক গুন কমে যায়

Image source: Quota

রাতের বেলা একই ভাবে আমাদের মেরুদণ্ডের সামান্য পরিমাণ প্রসারণ ঘটে থাকেযখন আমরা শুয়ে থাকি গ্রাভিটি আমাদের কশেরুকা দিয়ে ক্রিয়া করতে পারে নাএকটি লাঠি ব্যবহার করেও পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারেন। যখন আপনি শুয়ে থাকেন লাঠিটি ব্যবহার করে দৈর্ঘ্য  মাপ নিন
এবার আপনার প্রকৃত উচ্চতার সাথে মিলিয়ে নিন এক বা দুই সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে গেছন তো? মহাকাশচারীরা একইভবেই আরেকটু বেশী লম্বা হয়দিনের বেলা দাঁড়ানো অবস্থায় মানুষের কশেরুকাসমুহ মহাকর্ষ দ্বারা চাপপ্রয়োগ প্রাপ্ত হয়কিন্তু রাতেরবেলা, শুয়ে থাকলে গ্রাভিটি মেরুদণ্ড দিয়ে ক্রিয়া করতে পারেনা বলেই এমনটি ঘটে
জনসেন মহাকাশ কেন্দ্রের গবেষক সূধাকর রাজুলুর মতে, মহাকাশে গেলে কেন মেরুদণ্ড প্রসারিত হয় তা দুটি তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়প্রথম তত্ত্ব মতে, সম্প্রসারণ শুধু মেরুদণ্ডেই ঘটে থাকেশরীরের অন্যান্য অংশে ( পা, বাহু)  এর কোনো প্রভাব নেইকারন শরীরের অন্যান্য অস্থিগুলো মেরুদণ্ডের কশেরুকার মত সংকোচনযোগ্য নয়যেভাবেই হোক মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা মহাশূন্যে থাকে না, এটা মোটামুটি সোজা হয়ে যায়মহাশূন্যে কোনো গ্রাভিটি না থাকায়, মেরুদণ্ডে শিথীলতা বিরাজ করে
দ্বিতীয় তত্ত্ব মতে, মেরুদণ্ডের কশেরুকার চাকতিগুলো গ্রাভিটির কারনে পরস্পরের সাথে চাপা অবস্থায় থাকেমেরুদণ্ডের মধ্য দিয়ে চাপ নিচের দিকে ক্রিয়া করায় এই সংকোচন ঘটেযখন মহাশূন্যে গ্রাভিটি চাপ কমে যায়, তখন এই চাকতিগুলো অধিক স্পাইনাল ফ্লুইড ধারন করতে সক্ষম হয়এই কারনে প্রসারণ ঘটেএতে অবশ্য প্রত্যেক কশেরুকার মধ্যে দূরত্ব তৈরী হয়
বিজ্ঞানীদের এক গবেষণা মতে, দুই সময় উচ্চতার এই পরিবর্তন ঘটেমহাশূন্যযান কক্ষপথে পৌঁছা মাত্রই প্রথম পরিবর্তনটি ঘটে থাকেএসময় মেরুদণ্ডের সম্প্রসারণের অধিকাংশই ঘটে থাকেবাকী সম্প্রসারণ পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ঘটতে থাকেকিন্তু এই সম্প্রসারণ চলতেই থাকে নাএক সময় বন্ধ হয়ে যায়যদি মহাকাশচারী চিরদিন মহাকাশে থাকে, সে বৃদ্ধি পেতেই থাকবে নাবর্তমানে মহাকাশচারীরা আলট্রা সাউন্ড ডিভাইস ব্যবহার করে তাদের শরীরের পেছনের অংশকে স্ক্যানিং করেএর মাধ্যেমেই গবেষকেরা মহাকাশে ৩০,৯০ কিংবা ১২০ দিন বিচরণ করা একজন মহাকাশচারীর মেরুদণ্ডকে পর্যবেক্ষন করে দেখেন আসলে কি ঘটে? আলট্রা সাউন্ড ডিভাইস হলো বিশেষ ধরনের ডিভাইস, যা ব্যবহার করে শরীরের স্বাভাবিক গতি, পেশী সঞ্চালন এবং শরীরের অন্যান্য কর্মকান্ডগুলো জানা যায়গবেষকগণ পৃথিবীতে বসেই আলট্রা সাউন্ড ডিভাইসের পাঠানো মেরুদণ্ডের সারভাইকল লাম্বার অঞ্চলের ছবি বিশ্লেষণ করে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
"তবে মজার ব্যাপার হলো, বৃদ্ধি প্রাপ্ত মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ফিরে আসলে দশ দিনের মধ্যে আবার  পূর্বের উচ্চতায় চলে
আসে"

যাহোক, মহাকাশচারীদের অতিরিক্ত এই বৃদ্ধি কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে নাকারন মহাকাশচারীদের জন্য এমন স্পেস সুইট বা পোষাক ব্যবহার করা হয়, যেখানে অভ্যন্তরীণ প্রসারণের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে
মহাকাশে মানুষের মেরুদণ্ডের এই অস্বাভাবিক পরিণতির তথ্য সর্বপ্রথম স্কাইল্যাব মিশন থেকে সংগ্রহ করা হয়প্রায় বিশ বছর আগে ছয়জন মহাকাশচারী উপর এই গবেষনাটি করা হয়তারা প্রত্যেকে % করে বৃদ্ধি পায়।   
তবে মজার ব্যাপার হলো, বৃদ্ধি প্রাপ্ত মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ফিরে আসলে দশ দিনের মধ্যে আবার  পূর্বের উচ্চতায় চলে আসে
Video credit: curiousminds 97

No comments

Theme images by JacobH. Powered by Blogger.