কসমোলজী বা সৃষ্টিতত্ব কী ?


কসমোলজী (Cosmology) বা সৃষ্টিতত্ব বলতে মহাবিশ্বের উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ এবং চূড়ান্ত পরিণতি সংক্রান্ত আলোচনা বোঝায়। একে মহাবিশ্ব তত্বও বলা হয়ে থাকে। 
 
    চিত্রঃ সুন্দর এই মহাবিশ্ব (উৎসঃ উইকিপিডিয়া
এই শব্দটি সর্বপ্রথম ইংরেজ প্রত্নতাত্বিক ও অভিধানলেখক থমাস ব্লাউন্টস ১৬৫৬ সালে ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে জার্মান  দার্শনিক ক্রিশ্চিয়ান অলফ ১৭৩১ সালে ল্যাটিন ভাষায় কসমোলজিয়া জেনারেলিজ বইতে শব্দটি উল্লেখ করেন। এই পরিভাষাটি সাধারণ বা বিশেষভাবে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।তবে আধুনিক সময়ে কসমোলজীতে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যাই প্রাধান্য পায়। তাই অনেকেই একে বিজ্ঞান তথা জ্যেতির্বিজ্ঞানের একটি শাখা বলেই বিবেচনা করে থাকেন। 
তবে সংগাভিত্তিক বিবেচনায় এই পরিভাষাটি বিজ্ঞানের একক কোনো আলোচিত  বিষয় নয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পরিভাষা হিসেবে ব্যবহারের পূর্বেও অনেক বিজ্ঞানী, দার্শনিক, ধর্মতত্ববিদ, বহুজ্ঞ এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। 
 তাছাড়া এ বিষয়ে অনেক পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। ঐশী ধর্মগ্রন্থেও এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। বিষয়টি আলাদা আলাদাভাবে  নিজস্ব দৃষ্টিভংগির আলোকে আলোচিত হয়েছে। তাই প্রচলিত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির আলোকে অধিকাংশই প্রমানিত নয়।
চিত্রঃ ক্রিশ্চিয়ান অলফ
(উৎসঃ উইকিপিডিয়া)

অপরদিকে  বিজ্ঞান হল পদ্ধতিগত উপায়ে পর্যবেক্ষন ও প্রমাণ নির্ভর জ্ঞান। 
কিন্তু সৃষ্টিতত্বের তাত্বিক আলোচনায় জ্ঞানের এই শাখাকে বৈজ্ঞানিক বিবৃতির পাশাপশি নির্ভর করতে হয়েছে অনেক  অবৈজ্ঞানিক বিবৃতি ও ধারণার উপর।আর এই অবৈজ্ঞানিক বিবৃতি ও ধারণাসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব নয়। 
অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবৈজ্ঞানিক বিবৃতি ও ধারণাসমূহ সন্নিবেশিত হয়েছে পদার্থবিদ্যা এবং স্থান ও কাল সম্পর্কে বিজ্ঞ দার্শনিক এবং অধিবিদ্যাবিৎ দের (Metaphysician) দ্বারা।এই অবৈজ্ঞানিক বিবৃতি ও ধারণাসমূহ পর্যবেক্ষিত জ্ঞানকে তাত্বিক রুপ দিতেই ব্যবহৃত হয়েছে। এই অবৈজ্ঞানিক বিবৃতি ও ধারণাসমূহ উৎপত্তির দিক থেকে দর্শনভিত্তিক। 

তাই বারবার বিতর্ক তৈরি হচ্ছে বৈজ্ঞানিক এই তত্ব নিয়ে। 
যেহেতু সংগাভিত্তিক বিবেচনায় সৃষ্টিতত্ব বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ব্যাখ্যাযোগ্য। তাই আমি বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনায় সৃষ্টিতত্ব বলতে “ভৌত সৃষ্টিতত্ব (Physical Cosmology) ”  পরিভাষা ব্যবহার করাকেই সঠিক মনে করি।
ভৌত সৃষ্টিতত্ব বলতে মহাবিশ্বের উৎপত্তি, বৃহৎ পরিসরে গঠন ও গতিবিদ্যা, চূড়ান্ত পরিনতি এবং অনুসৃত বৈজ্ঞানিক সূত্রগুলোর বিজ্ঞাভিত্তিক আলোচনাকেই বোঝায়। তবে ভৌত সৃষ্টিতত্ব ও জ্যেতির্বিদ্যা আদতে এক নয়। প্রথমটি গোটা মহাবিশ্ব নিয়ে কাজ করে আর অপরটি শুধু এর মধ্যকার নভস্থিত বস্তু নিয়ে আলোচনা করে। আধুনিক ভৌত সৃষ্টিতত্ব বিগ ব্যাং তত্বের অধীন যা পর্যবেক্ষনগত জ্যেতির্বিদ্যা ও কণা পদার্থবিদ্যার মিলন ঘটানোর প্রয়াস। আরো স্পষ্ট করে বললে, বিগ ব্যাং তত্বের সাথে অদৃশ্য শক্তি(Dark Energy) ও অদৃশ্য বস্তুর (Dark Matter) একীভূতকরন ,যা ল্যামডা-সিডিএম(Lambda-CDM) মডেল নামে পরিচিত।


No comments

Theme images by JacobH. Powered by Blogger.