সূর্যের ব্যবচ্ছেদঃঃ বিকিরণ অঞ্চল
সূর্যের কেন্দ্রকে ঘিরে থাকা বিকিরণ অঞ্চলের (Radiation Zone) ব্যাসার্ধ মোট ব্যাসার্ধের ৪৫% হয়ে থাকে। এটি সূর্যের কেন্দ্রের জন্য অন্তরক
( insulator)হিসেবে কাজ করে, যাতে ফিউশন বিক্রিয়া ঘটার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী হয়। কেন্দ্রে উৎপন্ন তাপ ও আলোক শক্তি তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ তথা ফোটন (প্রধানত এক্সরে) হিসেবে বিকিরণ, তাপীয় পরিবহন প্রক্রিয়ায় এ অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ অঞ্চলের ঘনত্ব ও তাপমাত্রা কেন্দ্র থেকে কম কিন্তু পরবর্তী অঞ্চল থেকে বেশী।
কেন্দ্রে উৎপন্ন এক্সরে বাবল তৈরী করে কম তাপমাত্রা, ঘনত্ব, চাপের পথ অনুসরন করেন সূর্য পৃষ্ঠের দিকে ধাবিত হয়। হাইড্রোজেন, হিলয়াম, অসম্পৃক্ত ইলেক্ট্রন দ্বারা বিকিরন অঞ্চল পূর্ণ থাকে। এখানে অবস্থিত আলগা ইলেক্ট্রন হিলিয়াম নিউক্লয়াস (He++) দ্বারা গৃহীত হয়ে আয়নিত হিলিয়াম পরমানুতে(H+) পরিনত করে। এই অঞ্চল আয়নিত হাইড্রোজেন, হিলিয়াম দ্বারা পূর্ন থাকে। আয়নিত উত্তপ্ত গ্যাস ও ইলেক্ট্রনের এ মিশ্রণ কে প্লাজমা বলা হয়। যা পদার্থের চতুর্থ অবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ অঞ্চলের গভীরে, এক্সরে বিভিন্ন কনার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বারবার সংঘর্ষের ফলে এক্সরের দিক বারবার পরিবর্তন হয়। দুটি ধাক্কার মধ্যে এক্স রে মাত্র কয়েক মিলিমিটার পথ অতিক্রম করে। এভাবে ধাক্কার পর ধাক্কা খেয়ে এক্সরে সৌর পৃষ্ঠের দিকে গমন করে। তাই ফোটন তথা এক্সরের এই অঞ্চল পাড়ি দিতে ১৭১,০০০ থেকে ১ মিলিয়ন বছর সময় লাগে। ধাক্কার দরুন এক্সরের শক্তি প্লাজমা অনু কর্তৃক শোষিত হওয়ায় এক্সরের শক্তি কমে যায় কিন্তু তরঙ্গদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়। ধীরে ধীরে এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে এবং পৃষ্ঠে এসে দৃশ্যমান আলোয় পরিনত হয়। একই সাথে এই অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রী কেলভিন থকে ১.৫ মিলিয়ন ডিগ্রী কেলভিনে হ্রাস পায়।
টেচোক্লাইন (tachocline)
এটি সূর্যের বিকিরণ অঞ্চল এবং পরিচলন অঞ্চলের মধ্যবর্তী অবস্থান্তর অঞ্চল। এর ব্যাসার্ধ সূর্যের মোট ব্যাসার্ধের ৪% হয়ে থাকে। এই আবরনের ভিতরে ও বাইরে সূর্যের ঘূর্নন বেগের যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। মূলত কেন্দ্রীয় অঞ্চল ও বিকিরণ অঞ্চলের ঘুর্নন বেগ পরিচলন অঞ্চল থেকে বেশী।
উৎসঃ উইকিপিডিয়া ।
No comments